ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়? (Vitamin E capsules) জানুন

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয় এবং প্রতিনিয়ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি, আপনি জানলে অবাক হবেন। অনেকে আবার এটি ত্বকের ফর্সা হওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকে, কেউ আবার স্বাস্থ্যের মোটাতাজা করার জন্যও  খেয়ে থাকেন। তো চলুন জেনে নেই,  সত্যি কি ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে ফর্সা হওয়া যায়, এবং মোটা হয় কিনা সে সম্পর্কে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ত্বকের যত্নে অথবা চুল পড়া কমাতেও অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আপনার জানা উচিত –  মানব শরীরের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল কতটা উপকারী এবং কি পরিমাণ অপকারিতা রয়েছে সে বিষয়ে। 

আগেই বলেছি শরীরের ত্বক এবং চুলের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার একটি ভালো সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য ই ক্যাপ বেশ কার্যকরী। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে, প্রতিটি ভালো জিনিসের মাঝেও ব্যবহারের ভুলের কারণে কিছু খারাপ প্রভাব বা সাইড ইফেক্টের কারণ হতে পারে। 

তাহলে জানা যাক ই ক্যাপ বা ভিটামিন ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও ক্ষতির দিকগুলোঃ 

ই ক্যাপসুল উপকারিতা কি

ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নানাবিদ উপকারিতা রয়েছে। যেমন:

এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়ক।

এছাড়াও ই ক্যাপ ক্যাপসুল ত্বকে ব্যবহারের ফলে বার্ধক্যের প্রভাব ও চামড়ার ভাঁজ পড়া অনেকাংশে কমায়। এছাড়াও রাতের ক্রিম হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ হালকা শীতল পরিবেশে বা শীতকালীন মৌসুমে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সারারাত মুখে লাগিয়ে রাখলে চেহারার ত্বক অনেকটাই ময়েশচার যুক্ত হবে। বিশেষত মেয়েদের ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে এটি বেশ কার্যকরী।

বিভিন্ন ধরনের হাড় ব্যথা সহ বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা রোধ করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর জুড়ি নেই। 

ই ক্যাপ ক্যাপসুল গুলোতে এক ধরনের তৈলাক্ত উপাদান থাকে, যেটি সিরাম হিসেবে বেশ কার্যকরী উপাদান মনে করা হয়। এই তেলটি ত্বকের টান পড়া,  ভাঁজ পড়া,  বিভিন্ন ধরনের বলিরেখা এবং চামড়ার দাগ দূর করতেও অনেক উপকারী। এজন্য ত্বকের নির্দিষ্ট স্থান পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে নিয়ে ক্যাপসুলের ভিতর থাকা সিরাম তেল দিয়ে আলতো ভাবে মেসেজ করতে হবে।

ফ্যাশন সচেতন নারী পুরুষ সকলের নখের যত্নে ই ক্যাপসুলটি  অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। অনেক ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ত্বক শুষ্ক হওয়ার ফলে, নখের গঠন ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মুখ ভেঙ্গেও যেতে পারে।  সুতরাং এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে নখের সঠিক যত্ন নিতে হবে। সেজন্য প্রথমে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভিতরে থাকা তৈলাক্ত তরল পদার্থটি বের করে নিন। এরপর রাতে শোয়ার আগে আঙ্গুলের নখের উপরে এবং চারি পার্শ্বে ভালোমতো লাগিয়ে নিবেন। 

আপনি কি মাথার চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত!  তাহলে বাড়িতে সাধারণত আপনি যে তেল ব্যবহার করেন যেমন: প্যারাসুট, নারিকেল তেল,  এলোভেরা বা এ ধরনের তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ভিতরে থাকা সিরাম একসঙ্গে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে মাথায় লেপন করুন। এভাবেই বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার চুলের ত্বক শক্তিশালী হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। 

সামুদ্রিক ভ্রমণকালীন সমুদ্র তীরের প্রচন্ড রোদের উত্তাপ থেকে ত্বকের পুড়ে যাওয়া বা উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের সানবার্ন থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকে মেসেজ করতে পারেন।

ই ক্যাপ এর অপকারিতা

যদিও ই ক্যাপের এতগুলো উপকারিতার মাঝে অপকারিতা উল্লেখ করা মুশকিল। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অর্থাৎ ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর;  তেমনি ভুল ভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতিও হতে পারে।

বিশেষত সংবেদনশীল ত্বকে ই ক্যাপের সরাসরি ব্যবহার প্রদাহের মত মারাত্মক ধরনের চর্ম রোগের কারণ হতে পারে। 

সেজন্য ত্বকের যত্নে সরাসরি ভিটামিন ই ব্যবহার এড়িয়ে, বরং লেবুর রস, মধু কিংবা দধির সাথে ই ক্যাপ এর তেল মিশ্রণ করে ত্বকে ব্যবহার  লাগাবেন। এছাড়াও চেহারার বিভিন্ন রকমের দাগ, ব্রণ এবং মেস্তা কমাতে পাকা পেঁপের সাথে মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তরল পদার্থটি ঢেলে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগাতে পারেন। এটি বেশ কার্যকরী ও স্বাস্থ্যকর।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি ক্ষতি হয়

হ্যাঁ অবশ্যই!  অতিমাত্রায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করলে পেটে আমাশয় সহ এলার্জিজনিত নানারকম প্রভাব পড়তে পারে। 

অনেকের আবার, ই ক্যাপ অতিমাত্রায় সেবনের ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বেড়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতিতেও ভোগতে হতে পারে। এছাড়াও, মস্তিষ্ক জনিত অলসতা, উদ্বেগ, এবং অস্থিরতা বিরাজ করতে পারে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়

শরীরের বিভিন্ন অংশকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি খাওয়ার ফলে ত্বকের উন্নয়ন ও চোখকে সুস্থ রাখতে বেশ উপকারিতা পাবেন। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ এবং বিভিন্ন রকমের অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। 

Vitamin E capsules ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়
Vitamin E capsules ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়? জানুন।

এছাড়াও ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে,  সেই সাথে এনজাইম বৃদ্ধি করার ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

রুটিন মাফিক ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি শরীরের ভিটামিন ই এর অভাব পূরণে ই ক্যাপসুলের বিকল্প নেই। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনের সরবরাহা করতে এবং নানা রকমের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে! তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন। নতুবা হিতের বিপরীত হতে পারে। 

ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খেলে কি হয়

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাথার চুল পড়ার মতো সমস্যা রোধ করতে  ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খাওয়া যেতে পারে। কারণ চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে, শুষ্ক মাথায় চুল পড়া রোধ করতে, মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করতে,  চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং গোঁড়া মজবুত রাখতে Vitamin E Capsule 400 অত্যন্ত কার্যকরী।

এছাড়াও শীতকালীন খুশকিযুক্ত মাথার  চামড়ায় তৈলাক্ত আভা রাখতে এবং খুশকি দূর করতে চুলের ব্যালেন্স রক্ষা করার জন্যও ভিটামিন ই ৪০০ ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিদিন ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া যাবে কি?

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে আপনাকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। কারণ প্রতিদিন ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে শরীরে কমন কিছু সাইড ইফেক্ট হতে পারে। যেমন ত্বকে র‌্যাশযুক্ত ছোপ ছোপ দাগ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ধরা বা মাথা ঝিমানো, দেহে ক্লান্তি অনুভব করাসহ বিভিন্ন রকমের শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। 

এছাড়াও অতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে –  হাড়ের দুর্বলতা বেড়ে যাওয়া সহ প্রশ্নের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে। এমনকি থাইরয়েড -এর মত জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি ফর্সা হওয়া যায়

নিশ্চয়ই!  নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহার করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা, ত্বক ফর্সা হওয়া সহ বেশ উপকারিতা পাওয়া যায়। এছাড়াও চেহারার ব্রণ, শরীরের ফুসকুড়ি, এবং বিভিন্ন অঙ্গের  ছোপ ছোপ দাগ দূর করতে ই ক্যাপ ক্যাপসুল এর তুলনা হয় না। 

শুধু তাই নয়! বরং ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের যত্নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ সহ সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং মুখ মন্ডল ও চেহারার ছোটখাটো যত্নের জন্য শর্টকাট সমাধান হলো ভিটামিন ই এর ব্যবহার করা।

আশা করি আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়, ই ক্যাপ ক্যাপসুল  খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশদভাবে জেনেছেন। তবে একটি কথা না বললেই নয়; প্রতিটি এলোপ্যাথিক মেডিসিনের পজিটিভ ইফেক্ট এর পাশাপাশি সাইড ইফেক্ট বা নেতিবাচক প্রভাব থাকেই। সুতরাং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার ও সেবন করা উচিত।

Leave a Comment